প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৩, ০০:৫৫
বৃষ্টি ও ঢলে বন্যার পদধ্বনি
সিলেটে পানিবন্দি লাখো মানুষ, নদনদীর পানি বাড়ছে, বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে আরো ১০ দিন
কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে নদনদীর পানি। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে পাহাড়ি ঢলের পানি। সব মিলে সারাদেশের বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের হাওড়গুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা এবং উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জে দ্রুতগতিতে বাড়ছে যমুনার নদীর পানি। সিরাজগঞ্জ ও এর উওরে অর্থাৎ গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ- এই এলাকায় তখন বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। তবে এবার দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কোনো আশঙ্কা এখনো করছে না বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। ভাঙনের কবলে পড়েছে রাজবাড়ী জেলার পদ্মাপাড়। গত কয়েকদিনের মতো আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকলে সারাদেশেই বন্যা হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর, বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যের পাশাপাশি আমাদের প্রতিনিধি খালেদ আহমদ (সিলেট), মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্ (সুনামগঞ্জ), ম. শফিকুল ইসলাম (নেত্রকোনা), বদরুল আলম দুলাল (সিরাজগঞ্জ), হাসান গোর্কী (রংপুর) এবং তৈয়বুর রহমানের (কুড়িগ্রাম) পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন।
সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : সিলেটে নদনদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। জনমনে বিরাজ করছে আতঙ্ক। টানা কয়েক দিন ধরে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিও অব্যাহত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বেশ সক্রিয় থাকার কারণে বৃষ্টি বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। আগামী এক সপ্তাহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
ইতোমধ্যে গতকাল রবিবার সিলেটের নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। সিলেট শহরের রাস্তাঘাটও পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। জেলার কোম্পানিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব উপজেলার স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে শহরে ঢুুকে পড়েছে। যে কারনে শহরের অনেক রাস্তাঘাট এখন পানির নিচে। যান চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানান, গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১১ মিলিমিটার। গতকাল সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে সুরমাসহ সব নদনদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার একাধিক উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। লোকালয় ও রাস্তাঘাটে পানি প্রবেশ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।
সিলেটে বন্যার শঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল এক বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ৪১৯ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ৪৬৬ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহসংস্কার বাবদ ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মজুত রয়েছে। প্রয়োজনে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
তিনি জানান, গত বছরের বন্যার সময় তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে আবারো প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া ৩-৪ লাখ টাকা করে স্টিলের দুটি বড় নৌকা কিনবে জেলা প্রশাসন। কারণ গত বছরের দফায় দফায় বন্যায় বড় নৌকার অভাব প্রকট হয়ে দেখা দেয়। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
সিলেট নগরীসহ জেলার ১৩ উপজেলাকে স্থায়ীভাবে বন্যা মুক্ত রাখতে সুরমা ও কুশিয়ারা খনন, নদী ভাঙনরোধ, কৃষিজমির চাষ বৃদ্ধি, মৎস্যসম্পদ বাড়ানো; সর্বোপরি এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ‘সিলেট জেলার সুরমা-কুশিয়রা নদীর অববাহিকায় সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সম্ভাব্য ব্যয় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্ব রিজিয়নের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটির সমীক্ষা শেষ হয়েছে। জুলাই মাসের মধ্যেই ডিপিপি প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এই অঞ্চলবাসী মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। প্রকল্পটি প্রণয়নে বিশেষ করে কৃষি, মৎস্যসম্পদসহ বিভিন্ন বিষয়াদির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এর জন্য স্থানীয়দেরও মতামত নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেঘালয়ের পাদদেশে সিলেটে বর্ষা এলেই বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি রোধেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে।
নেত্রকোনায় বাড়ছে নদনদীর পানি : ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কংস, ধনু, উব্দাখালী, সোমেশ্বরীসহ বিভিন্ন ছোট বড় নদনদীর বাড়ছে পানি। এর মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রবিবার দুপুর ২টার দিকে উব্দাখালী নদীর ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুদিনের বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, নেত্রকোনা সদর, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ঢলের পানি ঢুকলেও এখনো এসব এলাকা বন্যা কবলিত হয়নি। তিনি সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জেলা সদরে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বুধবার থেকে নেত্রকোনাসহ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ওই সময়ে নেত্রকোনায় বৃষ্টিপাত হয় প্রায় ৪৫ মিলিমিটার। এতে জেলার ছোট বড় সব নদনদীর পানি বেড়ে গেছে। এর মধ্যে গতকাল দুপুর ২টার পর থেকে উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। এছাড়া ওই উপজেলার মহাদেব নদ, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার সব কটি নদনদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে সুরমা, যাদুকাটা, সারি গোয়াইন, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলের স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সুনামগঞ্জে হু হু করে বাড়ছে বন্যার পানি, ডুবছে সড়ক : হাওড়ের জেলা সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবং মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির প্রবল বর্ষণে সুনামগঞ্জের নদনদী ও হাওড়ের পানি হু হু করে বাড়ছে। জেলার প্রধান নদী সুরমার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর ও ধর্মপাশার উপজেলার শত শত গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
টানা বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন। এছাড়াও জেলার বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলা এলাকায় সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেখানে মানুষজন মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ ছোটছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরুরি প্রয়োজনে জেলা সদরে যাতায়াত করছেন।
গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শুধু সুরমা নদী নয়; সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা, বৌলাই, রক্তি, কুশিয়ারা, চলতি, পাটলাই, নলজুর, খাসিয়ামারা, কালনীসহ সব নদনদীর পানিই বাড়ছে।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার সোলেমানপুর বাজারসংলগ্ন পাটলাই নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ মিলিমিটার, ছাতকের সুরমা নদীতে ১৭ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ২৪ মিলিমিটার ও দিরাইয়ে সুরমা নদীর পানি ৩ মিলিমিটার ও যাদুকাটা নদীর পানি শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে ৪৪ মিলিমিটার বেড়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে যাদুকাটা, চলতি খাসিয়ামারা, চেলা, মনাই, সোমেশ্বরীসহ সব পাহাড়ি নদীর পানি বেড়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সুনামগঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে। এ কারণে সুনামগঞ্জে পানি বাড়ছে। গতকাল রবিবার সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার আট সেন্টিমিটার নিচে ছিল। দুপুর ১২টায় সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৮৬ মিটার। এতে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ দশমিক ৮০ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্য নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
পাউবো সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণেই পানি বাড়ছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানিও কমবে। আপাতত বড় বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই আমাদের কাছে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার কোথাও এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। পানি কিছুটা বেড়েছে। সীমান্ত এলাকায় পাহাড়ি ঢলে কিছু রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে জেলা প্রশাসনের।
বিপদসীমা ছুঁইছুঁই তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলার পানি : কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে রংপুর বিভাগের নদনদীর পানি বাড়ছে। তিস্তা, দুধকুমার ও ধরলাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। নদীতে পানি বাড়ায় সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পূর্বাভাস থাকায় নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের উজানে ভারী থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদনদীর পানি বেড়েছে। গত শনিবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কাউনিয়ায় ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার দেড় মিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ১ দশমিক ৬৯ মিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ১ দশমিক ৭১ মিটার, তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ১ দশমিক ৩৭ মিটার, দুধকুমার নদী পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৬২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এদিকে রংপুরের ছোট নদীগুলোতেও বাড়ছে পানি। যমুনেশ্বরী নদীর বদরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ দশমিক ৬২ মিটার ও ঘাঘট নদী জাফরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ দশমিক ৩৭ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে পাড়ের বাসিন্দারা : রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি। হুমকির মধ্যে রয়েছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। বিলীনের পথে প্রস্তাবিত ‘রাজবাড়ী সেনানিবাস’ এলাকাও। গত কয়েকদিনের ভাঙনে রাজবাড়ী কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের এক কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কৃষিজমি হারিয়ে কাঁদছেন পদ্মাপাড়ের মানুষ।
সরেজমিনে জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া, লস্করদিয়া, চর-রামনগর, ভবানীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় চাপ নিয়ে নদীর পাড় ভাঙছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কৃষিজমি। কৃষকের রোপণ করা পাট, বাদাম নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে না পারলে আবারো বসতভিটা স্থানান্তর হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত চারটি গ্রামের শতাধিক পরিবার। ভাঙন রোধে স্থানীয়রা নিজের অর্থায়নে বাঁশ দিয়ে নদীর স্রোত অন্যদিকে দেয়ার চেষ্টা করছেন।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল আমীন বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। কালুখালীর কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা ভাঙনকবলিত এলাকা পর্যবেক্ষণ করছি।
যমুনায় বাড়ছে পানি : মৌসুমি বৃষ্টির কারণে উজানের ঢলে তিস্তা ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরাঞ্চলের সব নদনদীর পানি বাড়ার ধারাবাহিকতায় দ্রুত বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। নদীতে পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। নদীপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, চৌহালি, শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় নদীপাড়ের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। আরো ২-৩ দিন পানি বাড়া অব্যাহত থাকবে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে যমুনার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাবে। তবে পানি বাড়লেও আপাতত বন্যার শঙ্কা নেই।
কুড়িগ্রামের কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ : টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ সবগুলো নদনদীর পানি আবারো বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে নতুন করে পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা করছেন নদীপাড়ের মানুষ। এছাড়া নতুন করে নদীর পানি বেড়ে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় চাষিরা। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের কপালে। তবে পাউবো জানিয়েছে, পানি বাড়লেও এখনই বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা নেই।
বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে আরো ১০ দিন : ঢাকাসহ সারাদেশে গত কয়েকদিন ধরেই থেকে থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাটিতে ১৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ছাতকে। সেখানে ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে যে বৃষ্টিপাত চলছে তা আপাতত বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী ১০ দিন বৃষ্টির ধারা এরকম অব্যাহত থাকবে। কোনো জায়গায় কমে যেতে পারে, কোনো জায়গায় বেড়ে যেতে পারে। কিছু জায়গায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।