প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ০২:৩০
ঈদুল আজহার ছুটি একদিন বাড়লো
ঈদুল আজহার ছুটি একদিন বাড়লো। আগামী ২৭ জুন ছুটি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভা এ সিদ্ধান্ত নিলো। সোমবার (১৯ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন মন্ত্রী ২৭ জুন ছুটি অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে অফিস থাকা ওই মন্ত্রী নাম প্রকাশ করতে চাননি।
গত ঈদুল ফিতরের সময়ও ছুটি একদিন বাড়িয়ে দিয়েছিল সরকার। তখনও টানা পাঁচদিন ছুটি পেয়েছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
তবে পরে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে ঈদের ছুটি একদিন বাড়ানোর কথা জানান। তিনি বলেন, ২৭ জুন সরকারি ছুটি থাকবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতেই ঈদের ছুটি একদিন বাড়ানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ঈদের আগে সাধারণ ছুটি একদিন থাকে। একদিন ছুটি থাকলে মানুষ সবাই একসঙ্গে রওয়ানা করে। সড়কে চাপ পড়ে। গত ঈদে আমরা একদিন বাড়তি ছুটি দিয়েছিলাম, তখন খুব ভালো ফল পেয়েছি। গত ঈদুল ফিতরে কোনো জটিলতা হয়নি। দেখেছি যে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টটা ঠিক থাকে। গত ঈদে দেখেছেন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাটা ভালোভাবে করা হয়েছে। ঈদুল আজহার আগে যাতে দুদিন ছুটি পায়, সেই ব্যবস্থাটা প্রধানমন্ত্রী আজ করে দিয়েছেন।’
এতে এবার ঈদে আগামী ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত টানা পাঁচদিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৯ জুন মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ ছাড়াও বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি ঈদের ছুটি একদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।
গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, ঈদের সময় মানুষ যাতে সহজে গ্রামে যেতে পারে সে জন্য আমরা ২৭ জুন থেকে ঈদের ছুটির সুপারিশ করেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রিসভা।
তিনি বলেন, সামনে আমাদের কোরবানি ঈদ। এ সময় আইনশৃঙ্খলা যাতে ইয়ে (বিশৃঙ্খলা) না হয়। বাঙালিরা সবসময় ঘরমুখো। আমরা সবাই মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে চাই। এ কারণে অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও (বাড়ি যান অনেকেই), বহু লোক মারা যায় কিন্তু। গত ঈদে আলহামদুলিল্লাহ ভ্রমণটা যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। অন্য বছরের মতো এত ইয়ে (দুর্ঘটনা) হয়নি।
একই সঙ্গে রবিবার (১৮ জুন) সচিবালয়ে ঈদুল আজহার সময় আইনশৃঙ্খরা পরিস্থিতি নিয়ে সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটা (ঈদে একদিনের ছুটি বাড়ানো) একটা প্রস্তাব, আমরা মনে করি এটি যৌক্তিক প্রস্তাব। সুপারিশটি কেবিনেটে গেছে, সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত হবে।'
এছাড়া রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, পথে পথে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা’ বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিও ঈদে একদিনের (২৭ জুন) ছুটি বাড়ানোর দাবি জানায়।
এবারের ঈদে ঢাকা থেকে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে জানিয়ে সংগঠনটি জানিয়েছে, পূর্বনির্ধারিত সরকারি ছুটি শুরুর দিন ২৮ জুন সারাদেশের সবশ্রেণির গণপরিবহনে একসঙ্গে সব যাত্রী রাস্তায় নামলে যাতায়াত পরিস্থিতি কোমায় চলে যেতে পারে। এ কারণে ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রী চাপ কিছুটা কমতে পারে।
সোমবার সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে সভায় বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সেখানে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা এবং পবিত্র ঈদুল আজহার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
সৌদি আরবের আকাশে রবিবার (১৮ জুন) জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে দেশটিতে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে ২৮ জুন (বুধবার)।
সোমবার চাঁদ দেখা গেলে মঙ্গলবার (২০ জুন) থেকে জিলহজ মাস গণনা শুরু হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে আগামী ২৯ জুন (১০ জিলহজ) ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। চাঁদ দেখা না গেলে মঙ্গলবার জিলকদ মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে আগামী বুধবার (২১ জুন) থেকে জিলহজ মাস গণনা শুরু হবে, দেশে ঈদ পালিত হবে ৩০ জুন। তবে বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি আরবের পরের দিন ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে।
২৯ জুন ঈদ ধরেই সরকারি ছুটি নির্ধারণ করা আছে। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন (বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার) সরকারি ছুটি নির্ধারিত ছিল। তবে একদিন বাড়ায় ছুটি শুরু হবে ২৭ জুন (মঙ্গলবার) থেকে। এরপর ১ জুলাইও (শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি। এক্ষেত্রে ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত টানা পাঁচদিনের ছুটি ভোগ করবেন সরকারি চাকুরেরা।