সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:৫১

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি : কে জিতছে?

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি : কে জিতছে?
অনলাইন ডেস্ক

সম্প্রতি রাশিয়ার দখল থেকে বিশাল এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেন। দেশটির দাবি তারা প্রায় ৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা রুশ দখলমুক্ত করেছে। ইউক্রেনের এই অগ্রযাত্রা দেখে প্রশ্ন উঠেছে রাশিয়া কি তাহলে হেরে যাচ্ছে?

তবে, রাশিয়া বলছে, তারা পুনর্গঠিত হওয়ার জন্য সাময়িকভাবে পিছু হটেছে। এবং তারা এখনও ইউক্রেনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ দখল করে রেখেছে।

শুক্রবার উজবেকিস্তানে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে তিনি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের মূল পরিকল্পনায় কোনো বদল আনবেন না।

পুতিন বলেন, তার কোনো তাড়া নেই। ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে রুশ সেনাদের অভিযান ঠিক পথেই এগোচ্ছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, রাশিয়া এখনও পর্যন্ত তার পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করেনি।

পুতিন বলেন, ‘ডনবাসে আমাদের আক্রমণাত্মক অভিযান বন্ধ হচ্ছে না। রুশ সেনারা এগিয়ে যাচ্ছে- খুব দ্রুত গতিতে নয়- তবে তারা ধীরে ধীরে আরও বেশি এলাকা দখল করছে’।

পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস শিল্পাঞ্চলটিই এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু। ডনবাসের কিছু অংশ ২০১৪ সাল থেকেই রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে রয়েছে। খারকিভ অঞ্চল ডনবাসের অংশ নয়, যেখানে ইউক্রেন সম্প্রতি পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে।

শুক্রবারের মন্তব্যে পুতিন ইউক্রেনের পাল্টা হামলা অব্যাহত থাকলে ‘আরো বড়’ পরিণতির হুমকি দিয়েছেন। পুতিন বলেন, ‘আমি আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে রাশিয়ান সেনাবাহিনী পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে যুদ্ধ করছে না... শুধুমাত্র কিছু পেশাদার সৈনিক যুদ্ধ করছে’।

রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায়। দেশটির দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে একযোগে হামলা চালানো হয়। এবং কয়েকদিনের মধ্যেই রাজধানী কিয়েভ অবরোধ করে রুশ সেনারা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কিয়েভের আশেপাশের এলাকা রাশিয়ার দখলে ছিল। তবে তারা রাজধানীতে ঢুকতে পারেনি।

এপ্রিলের শুরুতে ইউক্রেনীয় সেনারা কিয়েভের আশেপাশের বিশাল এলাকা পুনরুদ্ধার করে। রাশিয়া কিয়েভের অবরোধ ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।

এরপর থেকে রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের দক্ষিণ, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অভিযানে মনোনিবেশ করে।

চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতে নাটকীয়ভাবে পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। উত্তর-পূর্বে পাল্টা আক্রমণ জোরদার করে ইউক্রেন রাশিয়ান বাহিনীকে হটিয়ে দেয়। খারকিভ শহরের চারপাশে ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার সহ মোট ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে ইউক্রেন।

ইজিয়ুম এবং কুপিয়ানস্ক শহর দুটি ১০ সেপ্টেম্বর পুনরুদ্ধার করে ইউক্রেন। এই দুটি শহর ছিল রাশিয়ান বাহিনীর প্রধান সরবরাহ কেন্দ্র। দেশটির দক্ষিণে খেরসন অঞ্চলের চারপাশেও ইউক্রেনের পাল্টা হামলা চলছে।

দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (আইএসডব্লিউ) বলেছে, ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ান বাহিনীর একটি ‘বড় অপারেশনাল পরাজয়’ ঘটিয়েছে।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেছেন, খারকিভে রাশিয়ান অবস্থানগুলো ‘সম্পূর্ণ পতনের’ শিকার হয়েছে।

তবে, আইএসডব্লিউ-এর মতে, রাশিয়া এখনও ইউক্রেনের প্রায় ২০% এলাকা দখল করে রেখেছে। রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলগুলো মূলত পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে এবং ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রাশিয়ার দখলে।

ডনবাস প্রধানত একটি রুশ-ভাষী এলাকা এবং রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করার পর সেখানকার রাশিয়াপন্থী বাহিনী ওই অঞ্চলের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি দখল করে নেয়। সেখানে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক প্রদেশ দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেন পুতিন।

লাভিভ সহ দেশটির পশ্চিমের অঞ্চলগুলোতে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও ভূমি দখলের কোনও চেষ্টা করেনি।

রাশিয়া এখন কী চায়?

রাশিয়া শুরু থেকেই ইউক্রেনে তার হামলাকে যুদ্ধ বলতে নারাজ ছিল। পুতিন এর নাম দিয়েছেন ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’।

ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরু করার সময় পুতিন বলেছিলেন, তার লক্ষ্য হচ্ছে ‘ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করা’।

আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেন যেন পশ্চিমা সামিরক জোট ন্যাটোতে যোগদান না করে তা নিশ্চিত করা।

রাশিয়ার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের রাজধানী দখল করে এর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা।

তবে, রাশিয়া এখন শুধু ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণের এলাকাগুলোতেই দখল বজায় রাখতে চায়।

ইউক্রেন কী চায়?

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমস্ত রুশ সেনাকে তাড়িয়ে দেওয়া এবং ‘আমাদের পুরো এলাকা দখলমুক্ত করা’।

জেলেনস্কি রাশিয়া থেকে পুনরুদ্ধার করা অঞ্চলগুলো ধরে রাখতে পশ্চিমাদের কাছে আরও অর্থ এবং যুদ্ধ সরঞ্জামের জন্যও আবেদন করেছেন। মূলত পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়েই এখন ইউক্রেন রাশিয়ার ওপর পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারছে।

কত মানুষ মারা গেছে?

উভয় পক্ষই ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যদিও কেউই সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি।

ইউক্রেন দাবি করেছে যে, তারা ৫০ হাজারেরও বেশি রাশিয়ান সৈন্যকে হত্যা করেছে এবং আগস্টের শেষে বলেছে যে, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে তারা প্রায় ৯ হাজার সামরিক কর্মীকে হারিয়েছে।

রাশিয়া খুব কমই তাদের নিজেদের সৈন্যদের নিহতের কথা প্রকাশ করে। গত মার্চ মাসে রাশিয়া বলেছিল, আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের ১,৩৫১ জন সৈন্য মারা গেছে।

জুলাই মাসে, মার্কিন কর্মকর্তারা অনুমান করেছিলেন, প্রায় ১৫ হাজার রুশ সৈন্য মারা গেছে।

বেসামরিক মানুষও মারা গেছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘ ৫,৭০০-রও বেশি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তবে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়