প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:০১
ইমরান খানের পর তার দলের প্রায় সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
পাকিস্তানের সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মনোনয়নপত্র আগেই বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। এবার তার রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রায় সব প্রার্থীর মনোনয়ও বাতিল করেছে ইসিপি।
পিটিআইয়ের মুখপাত্র রাউফ হাসান বলেছেন, রোববার (৩১ ডিসেম্বর ২০২৩) আমাদের দলের প্রায় সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পিটিআইয়ের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ প্রার্থী এই তালিকায় রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন থেকে পিটিআইকে বাইরে রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে ইসিপি। কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা রাজনীতি ছাড়বো না, নির্বাচনও বয়কট করবো না। আমরা তাদের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো।
জাতীয় পরিষদের দুইটি নির্বাচনী এলাকা লাহোরের এনএ-১১২ ও নিজ শহর মিয়ানওয়ালির এনএ-৮৯ এর জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ইমরান খান। দুটি আসনেই তার মনোয়নপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়।
মিয়ানওয়ালির সহকারী কমিশনার গুলাম মুর্তাজা বলেন, তোষাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়াসহ আরও কিছু কারণে এনএ-৮৯ আসনে ইমরান খানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তাই এ আসন থেকে তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না। একই কারণে এনএ-১২২ (লাহোর-৬) আসন থেকেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, মুলতানের এনএ-১৫০, এনএ-১৫১ ও পিপি-২১৮ আসন ও সিন্ধু প্রদেশের থারপারকারের এনএ-২১৪ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন পিটিআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি। তিনিও এখন কারাগারে। তার মনোনয়নপত্রও বাতিল করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বাতিল হয়েছে তার ছেলে জেইন কুরেশি ও মেয়ে মেহের বানু কুরেশির মনোনয়নপত্রও।
পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ এলাহি, তার স্ত্রী কায়সারা বিবি ও ছেলে মুনিস এলাহির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। চকওয়াল আসনের আরেক প্রার্থী কলামিস্ট আয়াজ আমীরের মনোনয়নপত্র যাচাইয়ে বাদ পড়েছে।
ডনের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানওয়ালিতে পিটিআইয়ের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই বাতিল করা হয়েছে। পিটিআইয়ের নারী শাখার নেত্রী আমারা নিয়াজিসহ এনএ-৯০ আসনের এক প্রার্থীরও মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এনএ-১২৫ (লাহোর) আসনে জামশেদ ইকবাল চিমা, তার স্ত্রী মুসারাত জামশেদ চিমা ও জামিল আসগর ভাট্টির মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
এছাড়াও সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান অঞ্চলে বহু পিটিআই নেতাও বাদ পড়েছেন। তবে তুলনামূলক কম প্রভাবশালী কিছু পিটিআই নেতার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে পিটিআইয়ের মিত্র শেখ রশিদ ও তার ভাগ্নে রশিদ শফিকসহ আরও অনেক শীর্ষ নেতাও রয়েছেন।
আলোচিত তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ইসলামাবাদ দায়রা ও জজ আদালতের রায়ে ৩ বছর কারাদণ্ড ও ৫ বছরের নির্বাচন নিষেধাজ্ঞার শাস্তি পেয়েছেন ইমরান খান। বর্তমানে তিনি আদিয়ালা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
নিম্ন আদালতের রায় বাতিল চেয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) আপিল করেছিলেন ইমরান খানের আইনজীবীরা। পিটিআইয়ের প্রত্যাশা ছিল—নিম্ন আদালতের রায় বাতিল না করলেও অন্তত স্থগিত করবেন আইএইচসি। কিন্তু গত ২২ ডিসেম্বর ইসলামাবাদ হাইকোর্ট দায়রা ও জজ আদালতের রায়টিই বহাল রাখার রায় দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে তার পরের দিনই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন পিটিআইয়ের আইনজীবীরা। একই দিন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে লাহোর ও মিনাওয়ালির দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন ইমরান খান। কিন্তু গত শনিবার (৩০ ডিসেম্বর ২০২৩) সেই মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয় ইসিপি। তার পরের দিন পিটিআইয়ের অধিকাংশ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেওয়া হলো।
পিটিআই নেতা লতিফ খোসা বলেছেন, আমাদের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আইনি লড়াই করতে প্রস্তুত। ধাক্কা খেলেও দলের মধ্যে শক্তিশালী বিকল্প প্রার্থী রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সূত্র: ডন