প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৪২
চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলিমদের যত অবদান
চিকিৎসাশাস্ত্র মানব সভ্যতার প্রাচীনতম শাস্ত্র। এই শাস্ত্রে অবদান রেখেছেন অনেক মুসলিম চিকিৎসাবিদ। এছাড়াও মানব সভ্যতার বিকাশে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, আইন, জ্যোতির্বিদ্যাসহ নানা বিষয়ে মুসলিমদের অবদান প্রশংসার যোগ্য। তবে আজ আলোচনা করবো চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলিমদের অবদান নিয়ে।
আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে যেসব মুসলিম বিজ্ঞানী অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন, চলুন জেনে নিই সেসব মুসলিম চিকিৎসাবিদ সম্পর্কে—
ইবনে সিনা
সর্বকালের অন্যতম সেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক আবু আলী হুসাইন ইবনে সিনা। তিনি উজবেকিস্তানে (৯৮০-১০৩৭) জন্মগ্রহণ করেন। ইউরোপে তিনি আভিসিনা নামে পরিচিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ‘আল কানুন্’ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ। একে চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বলা হয়। পাঁচ খণ্ডে এবং ৮০০ পরিচ্ছেদে লেখা গ্রন্থে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর রচিত ১৬টি মৌলিক গ্রন্থের ১৫টিতে তিনি বিভিন্ন রোগের কারণ ও চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম মস্তিষ্কে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ঝিল্লির প্রদাহ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তাছাড়া তিনি যক্ষ্মা রোগের সংক্রামক, প্রকৃতি, প্রাণী ও মৃত্তিকা দ্বারা রোগ বিস্তারের ধারণা ও কৃমি রোগ সম্পর্কে আলোচনা করেন।
আল-রাজি
মুসলিম চিকিৎসাবিদদের মধ্যে আবু বকর মুহাম্মদ বিন জাকারিয়া আল-রাজি (৮৬২-৯২৫) ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একজন চিকিৎসাবিদ। মানুষের কিডনি ও গলব্লাডারে পাথর কেন হয়, সে সম্পর্কে তিনি মৌলিক তথ্যপূর্ণ বই লিখেছেন। লাশ কাটার বিষয়ে তিনি লিপিবদ্ধ করেন ‘আল জুদারি ওয়াল হাসবাহ’। এটি লাতিন ও ইউরোপের সব ভাষায় অনুবাদ করা হয়। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে ‘আল হাবি’। এতে সব ধরনের রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বইটিতে তিনি প্রতিটি রোগ সম্পর্কে প্রথমে গ্রিক, সিরীয়, আরবি, ইরানি ও ভারতীয় চিকিৎসা প্রণালির বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তারপর নিজের মতামত ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।
ইবনে রুশদ
মুসলিমদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও পণ্ডিত হিসেবে ইবনে রুশদের (১১২৬-১১৯৮) নাম ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। রেনেসাঁর যুগে ইউরোপে তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। স্পেনের কর্দোভায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইবনে রুশদ। ইবনে রুশদের পুরো নাম আবু আল ওয়ালিদ মোহাম্মদ ইবনে আহমাদ ইবনে রুশদ। তবে পশ্চিমা বিশ্বে ‘অ্যাভেরোস’ নামে পরিচিত তিনি। তার রচিত অসাধারণ গ্রন্থ ‘কিতাব আল কুলিয়াত ফি আল তিব্ব’ সমগ্র ইউরোপ এবং আরব বিশ্বে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান পাঠ্যবই ছিল। এতে আছে চিকিৎসাশাস্ত্রের তিনটি মৌল বিষয়। রোগ বিশ্লেষণ (ডায়াগনোসিস), নিরাময় (কিউরি) এবং প্রতিরোধ (প্রিভেনশন)।
আলি আত-তাবারি
আলি আত তাবারি (৮৩৯-৯২০) ছিলেন মুসলিম খলিফা মুতাওয়াক্কিলের গৃহচিকিৎসক। তিনি খলিফার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ফেরদৌস উল হিকমা’ নামে একখানা বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে শুধু চিকিৎসাশাস্ত্রই নয়, দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। এটি গ্রিক, ইরানি ও ভারতীয় শাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে রচিত।
আলি আল মাওসুলি
চক্ষু চিকিৎসায় মুসলমানদের মৌলিক আবিষ্কার আছে। আলি আল মাওসুলি চোখের ছানি অপারেশনে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। জর্জ সার্টনও তাকে জগতের সর্বপ্রথম মুসলিম চক্ষু চিকিৎসক বলে অকপটে স্বীকার করেছেন। তার ‘তাজকিরাতুল কাহহালিন’ চক্ষু চিকিৎসায় সবচেয়ে দুর্লভ ও মূল্যবান গ্রন্থ।