রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩, ০৪:২২

প্রয়াত সমরেশ মজুমদার, সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া

প্রয়াত সমরেশ মজুমদার, সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া
অনলাইন ডেস্ক

না ফেরার দেশে দুই বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। সোমবার (৮ মে) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল অ্যাপোলো গ্লেনিগলস হাসপাতালে ভর্তি হন সমরেশ মজুমদার। ওইদিন সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

সেই থেকে হাসপাতালটির আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন ‘কালবেলা’র স্রষ্টা। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শেষ তিনদিন তাকে ভেন্টিলেশনেও রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।

শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এই কথাসাহিত্যিক। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে ‘ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ’-এ ভুগছিলেন তিনি।

উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গাসহ একের পর এক কালজয়ী উপন্যাসের স্রষ্ঠা ছিলেন সমরেশ মজুমদার। গোয়েন্দা চরিত্র ‘অর্জুন’র স্রষ্টাও তিনি।

১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয় সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও বঙ্কিম পুরস্কার, আইআইএমএস সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও অন্যতম সেরা লেখক হিসেবে পাঠকের মন জয় করেছেন সমরেশ মজুমদার। তার প্রয়াণের খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দুই বাংলায়।

সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। শোকবার্তায় তিনি লিখেছেন, বিশিষ্ট সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকপ্রকাশ করছি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৮ সালে তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। এছাড়া তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বিএফজেজে পুরস্কারসহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সমরেশ মজুমদারের প্রয়াণে সাহিত্য জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমি সমরেশ মজুমদারের আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

শোক জানিয়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, তার এই চলে যাওয়াটা আকস্মিক। ও প্রায়ই আমাকে ফোন করে আমার শরীরের খোঁজখবর নিতো। কেমন আছি, কী লিখছি- এগুলো জিজ্ঞেস করতো। এসব কথা মনে পড়ে। ওর ডাকনাম ছিল বাবলু। আমি সেই নামেই ডাকতাম। ও আমাকে বলতো, বাবলু বলে ডাকার আর কেউ নেই, একমাত্র তুমিই রয়েছো। ও আমার কাছে ছোট ভাইয়ের মতো ছিল। আজকে সত্যি খুব খারাপ দিন।

সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের প্রয়ানে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজক কলকাতা বুক সেলার অ্যান্ড গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। অ্যাপোলো হাসপাতালের সামনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাংলা সাহিত্য জগৎ ক্রমশ দীন থেকে দীনতর হচ্ছে। কোভিডের সময় আমরা বেশ কয়েকজনকে হারিয়েছি। প্রথম সারির যে কয়জন সাহিত্যিক, তাদের মধ্যে এক মহীরুহ চলে গেলেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ৫৫ বছরের বেশি সময় কলমের জাদুতে সাহিত্য জগৎ মাতিয়ে রেখেছিলেন যে মানুষটি, আজ তিনি চলে গেলেন।

এদিকে, সমরেশ মজুমদারের মৃত্যুর পরেই কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারে অ্যাপোলো হাসপাতালে ছুটে আসেন মেয়ে দোয়েল মজুমদার। তিনি জানান, বাবা বহুদিন ধরে তিনি সিওপিডি সমস্যায় ভুগছিলেন। হঠাৎ করে তার ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।

দোয়েল আরও জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ সমরেশ মজুমদারের মরদেহ অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে কলকাতার ৬৪-বি, শ্যামপুকুর স্ট্রিটের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওই বাড়িতেই মরদেহ শায়িত থাকবে। তবে কোনো আচার-অনুষ্ঠান হবে না। কারণ, বাবা সেটি চাইতেন না। মঙ্গলবার দুপুরে নিমতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে প্রয়াত সাহিত্যিকের।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়