প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০২:৫৫
ঢাকা আন্দোলিত হলো সুমনে
জীবনমুখী গানের শিল্পী কবির সুমন মানেই দর্শকের মনে একরাশ আলোড়ন। যে আলোড়ন স্মরণ করিয়ে দেয়া নব্বই দশককে। আনন্দে আন্দোলিত প্রাণ ছুঁয়ে দেয়া যেন খুশির তুফান। শনিবারও (১৫ অক্টোবর) এর ব্যত্যয় ঘটেনি। জীবনমুখি গানের পথিকৃৎ কবীর সুমনকে সশরীরে পেয়ে ভক্তরা যেন উন্মাতাল হয়ে উঠেন। করতালির মধ্য দিয়ে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানায় উপস্থিত দর্শকেরা।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে শনিবার বিকাল সোয়া পাঁচটায় কবির সুমন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মঞ্চে ওঠার পর এমন বাধভাঙা ভালোবাসার বন্যা দেখা গেছে। ‘তোমাকে চাই-এর ৩০ বছর উদযাপন’ শিরোনামে গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পিপহোল।
ভক্ত দর্শকদের উন্মাতাল ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে কবির সুমন বলেন, আমি আগে একাই গাইতাম, বাজাতাম। স্নায়ুর অসুখের কারণে গিটার বাজাতে পারি না। হাঁটাচলা, উঠাবাসায় সমস্যা হয়, তবে কণ্ঠ সচল আছে এখনো সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।
গান শুরু করার আগে তার সফরসঙ্গী তিনজনকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তার ছোট্ট বক্তব্যে কবির সুমন তার কিছু অপারগতার কথা। বললেন, এখন গিটার বাজাতে পারি না, এটা নিয়ে দুঃখ নেই। গুরুদের কৃপায় গাইতে পারি। এটাই আনন্দ। আবার মজার এই পরিবেশে টেনে দিলেন গম্ভীরতা; বললেন, এমন ভাগ্য করে জন্মাইনি যে, বাংলাদেশের মাটিতে মরবো।
শরীরে বাসা বাঁধা দুটো রোগের কারণে এখন আর ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারেন না এই গানওয়ালা। চলাচলের জন্য বসতে হয় চলন্ত চেয়ারে। সমস্যা হয় কোথাও একটানা বসে থাকলেও। সেটি মনে করিয়ে দিয়ে সুমন বললেন, মাঝে মাঝে মনে হয় শুয়ে শুয়ে গান গাই! শুরুতে শোনালেন ‘একেকটা দিন’। এরপর একে একে গেয়ে গেলেন ‘পুরানো সেই দিনের কথা’, ‘হাল ছেড়োনা বন্ধু’, তার সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে বসে থাকেন শ্রোতারা।
কবি শহীদ কাদরীর বিখ্যাত কবিতাকে ‘তোমাকে অভিভাদন প্রিয়তমা’ সুর দিয়েছিলেন সুমন, অনুষ্ঠানে গেয়ে শোনালেন সেটি। গানের ফাঁকে তার বন্ধু শহীদ কাদরীর স্মৃতিচারণও করলেন আবেগ দিয়ে। জননীসাহসিকা সুফিয়া কামালকে নিয়ে তাঁর লেখা গান ওই তো লক্ষ ছেলেমেয়ে দামাল নাতি-নাতনি দামাল/ সবুজ দ্বীপের মতো মাঝখানে সুফিয়া কামাল’ শোনালেন। তারপর কণ্ঠে তুলে নিলেন ‘বাংলার ধনুকের ছিলায় ছিলায় যত গান’।
পরের পরিবেশনায় আপষহীনতার সুরে বললেন, ‘যত ভাবো কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ/ আমাকে নয় আমার আপষ কিনছ তুমি/ তবে জিতল কে জন্মভূমি জন্মভূমি’। তারপর গাইলেন, ‘কখনো সময় আসে/জীবন মুচকি হাসে’। এ ছাড়াও গাইলেন তার অন্যান্য জনপ্রিয় গানগুলো।
শিল্পীর তোমাকে চাই অ্যালবামের ত্রিশ বছর উদযাপনের তিন দিনব্যাপী সঙ্গীতানুষ্ঠানের প্রথম আসর ছিল এটি। আগামী ১৮ অক্টোবর একই মিলনায়তনে বাংলা খেয়াল গেয়ে শোনাবেন সুমন। সর্বশেষ আসরটি হবে ২১ অক্টোবর এখানেই, সেদিন গাইবেন আধুনিক বাংলা গান।
মাঝখানে বিরতিতে গেলেন গানওয়ালা। যাবার আগে শোনালেন বাংলাদেশ নিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতির কথা। হাতের পাশে রাখা ইনহেলার দেখিয়ে বললেন, ‘ভয় পাবেন না, মরবো না। আমি এমন ভাগ্য করে জন্মাইনি যে, বাংলাদেশের মাটিতে মরবো।’
এরপরই অনুষ্ঠানস্থল থেকে আয়োজকরা বের করে দেয় গণমাধ্যমকর্মীদের! এতে প্রচণ্ড বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় আয়োজকদের প্রতি। টিকিট অব্যবস্থাপনা, অডিটোরিয়াম জটিলতা এবং সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্য আচরণের কারণে আগে থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান পিপহোল। যার শেষ পেরেকটা পড়লো সুমনের প্রথম দিনের আয়োজনের আধা ঘণ্টার মধ্যে সংবাদকর্মীদের বের করে দেওয়ার মাধ্যমে।
এই বিষয়ে আয়োজকদের বক্তব্য, সাংবাদিকদের আধাঘণ্টা সুযোগ দেওয়া হলো সংবাদ সংগ্রহ ও ভিডিও ফুটেজের জন্য। তারা তো টিকিট কাটা দর্শক নন। ফলে তাদের উপস্থিতির কারণে টিকিট-কাটা দর্শকদের সংগীত উপভোগে ব্যাঘাত ঘটবে!
এর আগে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে ১৫-১৮ অক্টোবর পর্যন্ত কবীর সুমনের গানের তিনটি অনুষ্ঠানের সূচি ঘোষণা করে আয়োজক প্রতিষ্ঠান পিপহোলের কর্মকর্তারা। জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ১৫ অক্টোবর আধুনিক বাংলা গান, ১৮ অক্টোবর বাংলা খেয়াল ও ২১ অক্টোবর আধুনিক বাংলা গান পরিবেশনের কথা ছিল। সে অনুযায়ী অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি’র কাছে। কিন্তু অনুমতি মেলেনি। পরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে গান করার অনুমতি পান আয়োজকরা।