শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:০৬

জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানি করা ১১ কোটি টাকার ফেব্রিক আটক

জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানি করা ১১ কোটি টাকার ফেব্রিক আটক
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ইমপোর্ট পাস (আইপি) জালিয়াতি করে বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত চার কনটেইনার ফেব্রিক (কাপড়) আটক করেছে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

আটক চার কনটেইনারে ১০৮ টন ৪৭০ কেজি কাপড় রয়েছে, যার শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৪ টাকা এবং আনুমানিক বাজার মূল্য ১১ কোটি ৪৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৩২ টাকা।

চারটি চালানের মধ্যে তিনটি বিএলের (বিল অব লেডিং) শিপিং এজেন্ট এমসিসি ট্রান্সপোর্ট (মার্সক বাংলাদেশ লিমিটেড) এবং একটি বিএলের শিপিং এজেন্ট ইউরোম্যাক্স লজিস্টিক্স লিমিটেড।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত ফেব্রিকের একটি চালান গত বছরের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার সিএন্ডএফ এজেন্ট স্পিডওয়ে লজিস্টিকসের ভাড়াকৃত গুদাম থেকে আটক করা হয়। চালানটি সাভার ডিইপিজেডের গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে আমদানিকৃত। ওইসময় আটক ১০৭ টন ২৬০ কেজি ফেব্রিকের আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল ১০ কোটি টাকা। পরে গত ২০ অক্টোবর স্পিডওয়ে লজিস্টিকসের স্বত্বাধিকারী মো. খসরুল আলম আকনসহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে হালিশহর থানায় চোরাচালান ও মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি বন্ড কমিশনারেটেও মামলা করা হয়।

ওই অভিযানের সূত্র ধরে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানতে পারে গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে আরও একটি ফেব্রিকের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। শিপিং এজেন্ট চার কনটেইনারে কাপড়ের চালানটি বন্দরে আনার পর খালাস স্থগিত করে কাস্টমসের এআইআর (অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ) শাখার কর্মকর্তা ও বন্দর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কনটেইনার চারটি কিপডাউন করে কায়িক পরীক্ষা করা হয়। কায়িক পরীক্ষায় চার কনটেইনারে ১০৮ টন ৪৭০ কেজি ফেব্রিক পাওয়া যায়।

প্রাথমিকভাবে পাওয়া ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে চালানটি আমদানিকারক গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেড এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের যোগসাজশে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কোনো কাঁচামাল আমদানি করেনি বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের জানিয়েছে। মূলত বন্ড সুবিধায় কাপড় আমদানি করে এসব পণ্য রপ্তানিযোগ্য পোশাক তৈরি না করে চোরাইপথে খোলা বাজারে বিক্রি করছিল। আটক চালানটির কোনো সেলস কন্ট্রাক্টও ছিল না বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. বশীর আহমেদ বলেন, ‘গোপন সংবাদ ও আগে আটক একটি চালানের সূত্র ধরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসের আগেই চার কনটেইনারে আমদানি করা ১০৮ দশমিক ৪৭ টন ফেব্রিক আটক করা হয়েছে। আটক চালানটির কোনো এলসি কিংবা সেলস কন্ট্রাক্টও পাওয়া যায়নি। এতে ধারণা করা হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে বাদ দিয়ে অবৈধভাবে চালানটি আমদানি করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের কারখানার নামে বেপজা থেকে ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) নিয়ে শিল্পে কাঁচামাল আমদানি করার ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে হয় না। কিন্তু কাঁচামাল রপ্তানিকারকের বিল পরিশোধের জন্য কোনো ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয় আমদানিকারকে। সেক্ষেত্রে এলসি না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে সেলস কন্ট্রাক্ট জমা দিতে হয়। কিন্তু আটককৃত চালানে কোনো সেলস কন্ট্রাক্ট পাওয়া যায়নি। যে কারণে কাপড়ের চালানটি কারা আমদানি করেছে প্রাথমিক পর্যায়ে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে শুল্কায়নযোগ্য যে মূল্য টাকা দেখানো হয়েছে, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রপ্তানিকারককে পরিশোধ করা হয়নি।’

বশীর আহমেদ আরও বলেন, ‘এতে ধারণা করা হচ্ছে ফেব্রিকের চালানের পুরো টাকাটাই পাচার করা হয়েছে। এখন চালানটি আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শিপিং এজেন্টের নাম পাওয়া গেছে। পুরো চালানে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। যারা এ কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে ফৌজদারি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে আনা চালানটির যারাই আমদানি করেছে তাদের শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের ওপর ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়