বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২২, ২১:১৯

পদ্মা সেতু হয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ

পদ্মা সেতু হয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ
অনলাইন ডেস্ক

প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু হয়ে নির্বিঘ্নে ঈদ করতে বাড়ি ফিরছেন শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই হাজারো দুঃখ কষ্ট ভোগান্তি এবং দুর্ঘটনাময় ঈদযাত্রায় বাড়ি ফিরতো এই অঞ্চলের মানুষ। তাদের সেই লঞ্চ ফেরিঘাটের দীর্ঘ অপেক্ষার দিন শেষ। এখন তারা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করার জন্য নির্বিঘ্নে আনন্দ উচ্ছ্বাসে বাড়ি ফিরছেন।

এ যেন লাখো মানুষের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।

আগে যেখানে এই অঞ্চলের মানুষকে ৫-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করে নানা ভোগান্তি শেষে বাড়ি ফিরতে হতো। সেই মানুষগুলো আজ স্বস্তিতে স্বাচ্ছন্দে সড়ক পথে স্বল্প সময়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে চলে আসছেন বাড়িতে। একটা সময় বিকেল বা সন্ধ্যার পরে জেলার বাইরে কেউ যেতে পারত না। ইচ্ছে থাকলে যাওয়ার তেমন সুযোগ ছিল না। সেই মানুষগুলো আজ চাইলেই যখন তখন দেশের যেকোনো প্রান্তে যেতে পারছে নির্বিঘ্নে। এ জন্য শুধু ভোগান্তির অবসানই নয়, খুলে দিয়েছে অর্থনৈতিক ও সমৃদ্ধির দ্বার।

গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের দ্বার খুলে গেছে। সেই সাথে লাঘব হয়েছে দুঃখ কষ্ট আর সীমাহীন যন্ত্রনা। তাইতো এই অঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণ ভরে দোয়া করছেন।

আর একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাই ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে থাকা কর্মব্যস্ততাময় মানুষগুলো প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে ইতোমধ্যে গতকাল থেকেই আসতে শুরু করেছে। আজও পদ্মা সেতু দিয়ে ঘরমুখ মানুষের ঈদযাত্রার ঢল বয়ে যাচ্ছে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার বাসিন্দা মো. শিশির জানান, জীবনে এই প্রথম নিজের গাড়ি নিয়ে সড়ক পথে পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি আসলাম ঈদ করার জন্য। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে এভাবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়ি আসতে পারবো কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য। এ জন্য তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

এনামুল হক সুমন বলেন, আগে আমাদের বাড়ি ফিরতে ৫-৭ ঘণ্টা লেগে যেত। নদী পার হতে ফেরির অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হত। তারপরে ফেরি লঞ্চে অনেক সময় লাগত, ঘটত দুর্ঘটনা। অনেক সময় পদ্মা নদীর ঢেউ আর দুর্ঘটনার কথা ভেবে বাড়িতে ঈদ করতেও আসা হত না। আর এ বছর ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি বাড়িতে আসলাম। সময়কেও কম লেগেছে, কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। জার্নিটা অনেক ভালো লেগেছে। পদ্মা সেতু দেখতে দেখতে চলে আসলাম বাড়িতে।

আবুল খায়ের হিরো জানান, নানা ভোগান্তি আর ফেরি লঞ্চের দুর্ভোগের কথা ভেবে অনেক সময় বাড়িতে আসা হত না। মাঝেমধ্যে আসলেও সেই আরিচা ফেরিঘাট ফরিদপুর মাদারীপুর অনেক দূর ঘুরে তারপরে শরীয়তপুরে বাড়িতে আসতে হত। এই প্রথম পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে নিজের কার নিয়ে বাড়ি আসলাম পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ঈদ করার জন্য। পদ্মা সেতু পার হয়ে অল্প সময়ে বাড়ি চলে আসলাম। বাসা থেকে গাড়িতে উঠে চলে মাত্র দুই ঘণ্টায় গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছালাম। কৃতজ্ঞতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রতি। তার জন্য আমরা শরীয়তপুরবাসী ধন্য। দোয়া করি আল্লাহ তাকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখুক।

নড়িয়া উপজেলার কালিকাপ্রসাদের কমলা বেগম বলেন, আমি আমার ছেলে মেয়ে সবাইকে নিয়ে ঢাকাতে থাকি। আগে লঞ্চে ট্রলারে ফেরিতে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটার কারণে আসতাম না ভয় পেতাম। আসলেও একা আসতাম ছেলেমেয়েদের আনতাম না বা তারাও আসতে চাইত না। এবার পদ্মা সেতু হওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশে এসে ঈদ করার সাহস পেলাম। ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে উঠলাম নড়িয়াতে এসে নামলাম তেমন একটা সময়ও লাগেনি খুব তাড়াতাড়ি চলে আসছি। বাচ্চারা অনেক খুশি ভোগান্তিহীনভাবে আসতে পেরে।

জেলা পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুজ্জামান জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ঈদ করতে ঘর মুখ মানুষের আগমন শুরু হয়েছে। তবে এবার পদ্মা সেতু হওয়ায় অনেকটা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন তারা। এই ঘরমুখী মানুষের ঈদ যাত্রা আরও স্বস্তিদায়ক এবং ভোগান্তি ও হয়রানি লাঘবে হবে আমরা পুলিশ প্রশাসন মাঠে রয়েছি। কেউ যাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ অন্য ধরনের সমস্যাদায়ক কিছু করতে না পারে, সেদিকে আমাদের নজরদারি রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, ঈদে ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা শান্তিময় ও ঝামেলা মুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। কোনো পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি পরিবহনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায়। পদ্মা সেতু হওয়ায় স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে শরীয়তপুরবাসী। প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতার প্রতীক পদ্মা সেতু শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে দুর্ভোগ আর দুর্দশা থেকে মুক্তি দিয়েছে।

সূত্র: আরটিভি

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়